ইন্দোনেশিয়ার বালিতে অনুষ্ঠিত জি২০ শীর্ষ সম্মেলনের দু’টি উল্লেখযোগ্য ফলাফল প্রত্যেক ভারতীয়কে আনন্দ দিয়েছে এবং গর্বিত করেছে। প্রথমটি সাধারণ– ভারতের ২০২৩ সালের জন্য জি২০-এর সভাপতিত্ব গ্রহণ করা। কিন্তু দ্বিতীয় ফলাফলটি অধিক গুরুত্বপূর্ণ – একজন চিন্তাশীল নেতা হিসাবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর অবস্থানের শক্তিশালীকরণ।
অন্তিম ফলাফলটি এ কথা থেকে স্পষ্ট যে, শীর্ষ সম্মেলনের শেষে যৌথ ঘোষণায় প্রধানমন্ত্রী মোদীর ভাষণে উল্লিখিত সকল পরামর্শ এবং পর্যবেক্ষণের যথেষ্ট উল্লেখ ছিল।
দুই দিনের শীর্ষ সম্মেলন শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বের প্রধান অর্থনীতিগুলি বৈশ্বিক সমস্যাগুলির নিরিখে ভারতের সঙ্গে সহমত পোষণ করেছে, যার অন্যতম হল রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। জি২০ শীর্ষ সম্মেলনের চূড়ান্ত ঘোষণাটি প্রধানমন্ত্রী মোদীর এই মতামতের সঙ্গেই অনুরণিত হয়েছে যে, এটি যুদ্ধের যুগ নয়। তাঁর বক্তব্য এ কথাই দর্শায় যে, বিশ্বব্যাপী ভারতের কণ্ঠস্বরকে আর উপেক্ষা করা যাবে না।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিশ্বে শান্তি ও নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে জি২০ সদস্য দেশগুলিকে ‘দৃঢ় ও সম্মিলিত সংকল্প’ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।
ভারত অতিমারি তহবিলের মাধ্যমে স্থিতিশীল উন্নয়ন, বহুপাক্ষিক সংস্কার এবং দেশগুলির পারস্পরিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে একটি প্রধান ভূমিকা পালন করেছে। এই তহবিলের লক্ষ্য হল উন্নয়নশীল এবং অনুন্নত দেশগুলিকে কোভিড-পরবর্তী পরিস্থিতির মোকাবিলায় সহায়তা করা, যা বৈশ্বিক মঞ্চগুলির আনুষ্ঠানিক মতামতের একটি অংশ হয়ে উঠেছে। ভারত এ বিষয়ে ১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের অবদান রেখেছে।
যখনই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মতো কোনও বৈশ্বিক সমস্যা দেখা দেয়, সমগ্র বিশ্ব বিভিন্ন গোষ্ঠীতে বিভক্ত হয়ে পড়ে এবং সমাধানের জন্য কোনও ঐকমত্যে পৌঁছনো সম্ভব হয় না। বালিতে কূটনীতি এবং আলাপ-আলোচনার উপর প্রধানমন্ত্রী মোদীর বিশেষ জোর দেওয়া জট কাটাতে সাহায্য করেছে এবং দেশগুলির মধ্যে ঐকমত্য গড়ে তু্লেছে যা জি২০ মঞ্চটিকে বিশ্ব অর্থনীতিগুলির জন্য একটি রাজনৈতিক যুদ্ধক্ষেত্র হয়ে ওঠা থেকে প্রতিরোধ করবে।
শীর্ষ সম্মেলনের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী মোদী বৈশ্বিক নেতাদের সঙ্গে বৃদ্ধি পুনরুজ্জীবন, খাদ্য ও শক্তি নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা এবং স্বাস্থ্য ও ডিজিটাল রূপান্তর সংক্রান্ত সমস্যাগুলির সমাধানের মতো গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জগুলির বিষয়ে ব্যাপক আলোচনা চালান। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, ভারতের জি২০ সভাপতিত্ব হবে অন্তর্ভুক্তিমূলক, উচ্চাকাঙ্ক্ষী, নির্ণায়ক এবং কর্মসূচিকেন্দ্রিক বা পদক্ষেপভিত্তিক।
ভারত যেহেতু ২০২৩ সালে জি২০ শীর্ষ সম্মেলন আয়োজনের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করছে, তাই দেশের বিভিন্ন শহর ও রাজ্যে সারা বছরব্যাপী মঞ্চটির নানা সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। ভারতের বিস্ময়কর বৈচিত্র্য, অন্তর্ভুক্তিমূলক ঐতিহ্য এবং সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধি প্রত্যক্ষ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী মোদী বিশ্বনেতাদের স্বাগত জানিয়েছেন।
যাতে সকলেই ডিজিটাল রূপান্তরের সুবিধা পায় এবং সেগুলি ছোট গোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ না হয়ে পড়ে, তা সুনিশ্চিত করার জন্য তিনি জি২০ নেতাদের কাছেও আবেদন করেন।
ডিজিটালকরণের জন্য ভারতের প্রয়াসের কথা তুলে ধরার সময় প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন যে, দেশে প্রায় ৪০% লেনদেন ইতিমধ্যে ডিজিটাল মঞ্চের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছে এবং সরকার ডিজিটাল পরিচয়ের ভিত্তিতে কমপক্ষে ৪৬০ মিলিয়ন নতুন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলতে সমর্থ হয়েছে, যা আর্থিক অন্তর্ভুক্তির নিরিখে বর্তমানে ভারতকে এক বৈশ্বিক নেতা করে তুলেছে।
(লেখক এনআইডি ফাউন্ডেশনের প্রধান পৃষ্ঠপোষক এবং চণ্ডীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর। লেখকের মতামত ব্যক্তিগত)