জি২০ এবং নারীবাদী বিদেশ নীতি: বহুপাক্ষিকতাকে উন্নত করার ভারতীয় উপায়

Neha Khetrapal

জলবায়ু পরিবর্তনের উত্তরোত্তর প্রভাব, অতিমারি এবং আঞ্চলিক সংঘাতের মতো আধুনিক বিশ্বের নানাবিধ প্রতিবন্ধকতা অন্যান্য বৈষম্যের মধ্যে লিঙ্গ বৈষম্যকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। এই ক্রমবর্ধমান লিঙ্গ বৈষম্যগুলি ধারাবাহিক ভাবে ট্রান্সন্যাশনাল গভর্ন্যান্স নেটওয়ার্ক বা আন্তর্দেশীয় প্রশাসনিক শৃঙ্খল প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তাকেই দর্শায়, যা নারীদের অংশগ্রহণকে উন্নততর করার সুযোগ প্রদান করে। বেশ কয়েকটি দেশ দ্বারা গৃহীত নারীবাদী বিদেশ নীতি উদ্যোগের সঙ্গে সংযুক্ত আন্তর্জাতিক সম্পর্ক সংক্রান্ত গবেষকরা নারীবাদী বিদেশ নীতির উপর জোর দিয়েছেন এবং তা ভারতে লিঙ্গ-ভারসাম্যপূর্ণ বিদেশ নীতি পরিকাঠামো সম্পর্কে উত্সাহ জুগিয়েছে। ভারত জি২০-র সভাপতিত্ব গ্রহণ করার সঙ্গে সঙ্গে নারীবাদী বিদেশ নীতির বিষয়েও আলাপ-আলোচনা গতিশীলতা লাভ করেছে।

জি২০-র জন্য একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং পদক্ষেপভিত্তিক কর্মসূচির সঙ্গে সাযুজ্য রেখে গবেষক এবং তাত্ত্বিকরা বেশ কয়েকটি প্রশ্ন তুলেছেন: সাধারণ ভাবে গ্লোবাল সাউথ এবং বিশেষ করে ভারতের জি২০ সভাপতিত্ব কি একটি ফেমিনিস্ট ফরেন পলিসি বা নারীবাদী বিদেশ নীতি (এফএফপি) নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে সক্ষম? এফএফপি কি গার্হস্থ্য লিঙ্গ বৈষম্যের উন্নতির জন্য একটি অনুঘটক হিসাবে কাজ করতে পারে? এফএফপি-র ব্যাপারে উদ্দীপনা এবং নতুন করে তাত্ত্বিক কঠোরতার পরিপ্রেক্ষিতে ভারতীয় দৃষ্টিকোণ থেকে এফএফপি-র সারমর্মকে তুলে ধরার সময় এসেছে।

বেশ কয়েকটি দেশ দ্বারা গৃহীত নারীবাদী বিদেশ নীতি উদ্যোগের সঙ্গে সংযুক্ত আন্তর্জাতিক সম্পর্ক সংক্রান্ত গবেষকরা নারীবাদী বিদেশ নীতির উপর জোর দিয়েছেন এবং তা ভারতে লিঙ্গ-ভারসাম্যপূর্ণ বিদেশ নীতি পরিকাঠামো সম্পর্কে উত্সাহ জুগিয়েছে।

লিঙ্গ বৈষম্য এবং লিঙ্গ-সংবেদনশীল আন্তর্জাতিক প্রশাসনকে আন্তর্জাতিক আলাপ-আলোচনার শীর্ষে তুলে আনার জন্য সুনির্দিষ্ট প্রচেষ্টাগুলি ২০১৫ সালে তুর্কিয়ের সভাপতিত্বে উইমেন ২০-র (ডব্লিউ২০) একটি আনুষ্ঠানিক জি২০ এনগেজমেন্ট গ্রুপ গঠনের মাধ্যমে গৃহীত হয়েছিল। সেটির প্রধান কর্মসূচিই ছিল নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন। এ ভাবে নারী উদ্যোক্তা এবং শিক্ষাবিদদের একটি আন্তর্জাতিক শৃঙ্খল গড়ে উঠেছে। এই পদক্ষেপটি নীতিগত ভাবে তার পরিধির মধ্যে লিঙ্গ সমতাকে অন্তর্ভুক্ত করে জি২০-র শিরোপায় একটি নতুন পালক যোগ করেছে। কিন্তু ডব্লিউ২০-র রিয়েল টাইম সাফল্য সীমিত। ডব্লিউ২০-র মতাদর্শ একটি প্রভাবশালী নীতি কর্মে রূপান্তরিত করার কাজ এখনও বাকি।

ভারতের জি২০ সভাপতিত্ব এবং লিঙ্গ সংক্রান্ত সমস্যা

নয়াদিল্লি দ্বারা গৃহীত বিকেন্দ্রীকৃত এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক অবস্থানকে প্রতিফলিত করে ডব্লিউ২০ ইন্ডিয়া প্ল্যান নারী উন্নয়ন এবং নারী-নেতৃত্বাধীন উন্নয়নের জন্য একটি সক্ষম পরিবেশ তৈরি করতে শহুরে, গ্রামীণ ও উপজাতীয় এলাকার কণ্ঠস্বরকে উপস্থাপনের সুযোগ করে দেয়। ডব্লিউ২০ ইন্ডিয়া প্ল্যানের সাফল্য জন ভাগীদারি কর্মসূচিতে মহিলাদের উন্নততর অংশগ্রহণের মাধ্যমে পরিমাপ করা গেলেও ডব্লিউ২০-র কাজের পরিসরকে বৈচিত্র্যময় করে তোলার আরও সুযোগ রয়েছে।

এফএফপি-র উপর বিশেষ ডব্লিউ২০ মনোযোগ জ্ঞানের নির্মাণের লক্ষ্যে এবং নীতির সুপারিশগুলিতে অব্যবহিত রূপান্তরের প্রেক্ষিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে কাজ করতে পারে। এটি জন ভাগীদারি কর্মসূচির মাধ্যমে নারী এবং এলজিবিটিকিউ+ সম্প্রদায়ের সদস্যদের অভিজ্ঞতা-সহ কূটনৈতিক প্রচেষ্টা গঠনে মূল্যবান পরামর্শ প্রদান করতে সাহায্য করতে পারে। প্রস্তাবটির মধ্যে এই অনুমান অন্তর্নিহিত যে লিঙ্গের বিষয়টি আদতে জৈবিক লিঙ্গের সমতুল্য নয়।(১) তার পরিবর্তে লিঙ্গ সামাজিক ভাবে অনুমোদিত পুং এবং স্ত্রী বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে নিবিড় ভাবে জড়িত। তাই আন্তর্জাতিক রাজনীতির একটি একক বা সর্বাঙ্গীন লিঙ্গগত অভিজ্ঞতা নয়, বরং অনেকগুলিই বিদ্যমান।(২)

এফএফপি-র উপর বিশেষ ডব্লিউ২০ মনোযোগ জ্ঞানের নির্মাণের লক্ষ্যে এবং নীতির সুপারিশগুলিতে অব্যবহিত রূপান্তরের প্রেক্ষিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে কাজ করতে পারে।

এ ক্ষেত্রে একটি ‘সংক্ষিপ্ত এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক’ লিঙ্গ-ভারসাম্যপূর্ণ বিদেশ নীতি নির্মাণে ভারতের অবদান রয়েছে। এ ব্যাপারে প্রত্যাশা করা যায় যে, প্রান্তিক অংশগুলির সঙ্গে ডব্লিউ২০-র ঘনিষ্ঠ সম্পৃক্ততা অন্তত পক্ষে একটি নন-বাইনারি বা অযুগ্ম বিদেশ নীতি কর্মসূচিকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করবে, যেখানে নিরাপত্তা সমস্যাগুলি একটি প্রধান কূটনৈতিক পরিসর জুড়ে থাকবে। এই উদ্যোগগুলিকে নিরাপত্তা সংক্রান্ত সমস্যা বা নিরাপত্তা নীতির কঠিন ও সহজ দিকগুলির পুরুষত্ব বনাম নারীসুলভ ধারণার ঊর্ধ্বে ওঠার প্রচেষ্টা হিসাবে দেখানো যেতে পারে।

ডব্লিউ২০-র মতো এনগেজমেন্ট গ্রুপগুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে যেখানে জি২০ ওয়ার্কিং গ্রুপগুলি কৌশলগত ভূমিকা পালন করতে সক্ষম। বর্তমান সময়ের বিদেশ নীতির পোর্টফোলিও দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস, পর্যটন ও স্বাস্থ্য, লিঙ্গ সমতার সুযোগ দিলেও তা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আংশিক। ওয়ার্কিং গ্রুপগুলি ডব্লিউ২০ দ্বারা প্রদত্ত পরামর্শগুলির উপর ভিত্তি করে বিদেশ নীতির সমস্ত ক্ষেত্রে লিঙ্গ সমস্যাগুলিকে মূলধারার আওতায় আনার মাধ্যমে পরিস্থিতির উন্নতিতে কৌশলগত ভাবে সাহায্য করতে পারে। জি২০ পরিকাঠামোর মধ্যে প্রস্তাবিত দ্বি-স্তরীয় পদ্ধতি নীতিগত সিদ্ধান্ত নির্ধারণের জন্য লিঙ্গগত অভিজ্ঞতা অন্তর্ভুক্ত করার সুযোগ প্রদানের মাধ্যমে সমতার জন্য একটি সক্রিয় শর্ত হিসাবেও কাজ করতে পারে।

উন্নত লিঙ্গ সমতা থেকে আমরা কোন লাভ আশা করতে পারি? একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রত্যাশা আধিপত্যবাদী পুরুষত্বের শক্তির মোকাবিলা করছে যা এখনও পর্যন্ত নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের জন্য আন্তর্জাতিক সুপারিশগুলিতে নির্ণায়ক শক্তি প্রদানের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এটি বিবেচনা করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিসর। কারণ নারীবাদী বিশ্লেষকরা বিস্তৃত বহুমাত্রিক  পদ্ধতিতে নিরাপত্তাকে বিশ্লেষণ এবং সংজ্ঞায়িত করেন। আজকের বিশ্বে নিরাপত্তা সংক্রান্ত হুমকি শুধুমাত্র যুদ্ধ ও আঞ্চলিক সংঘাতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং স্বাস্থ্য, অর্থনীতি, প্রযুক্তি এবং পরিবেশগত সমস্যার মতো পরিসরেও ব্যাপ্ত। এবং ভারত তার জি২০ মেয়াদে নাগরিক সমাজের সঙ্গে তার বিদেশ নীতিকে সমন্বিত করে গ্লোবাল সাউথ ও তার বাইরেও একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে।

লিঙ্গ সমতা, জি২০ এবং বহুপাক্ষিকতা

আধুনিক দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং স্থিতিশীল শান্তি অর্জনের জন্য নয়াদিল্লি বারবার সংস্কারকৃত বহুপাক্ষিকতার উপর জোর দিয়েছে, যে আহ্বানটি জি২০-র ভারতীয় সভাপতিত্বে আরও শক্তিশালী হয়েছে। সংস্কারকৃত বহুপাক্ষিকতার জন্য প্রধানমন্ত্রী মোদীর দূরদৃষ্টি শান্তি, নিরাপত্তা এবং উন্নয়নের  মধ্যকার আন্তঃসম্পর্ককে অন্তর্ভুক্ত করে। ভারত রাষ্ট্রপুঞ্জের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে নারী সৈন্য পাঠিয়ে একটি উল্লেখযোগ্য কাজ করলেও জি২০ এবং ব্রিকস-এর মতো বহুপাক্ষিক মঞ্চে লিঙ্গ ব্যবধান মোকাবিলা করার জন্য ব্যাপক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এ ছাড়া ভারত আগামী সভাপতিত্বকারী দেশগুলিকে একই পথে হাঁটার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে পারে। লিঙ্গ-ভারসাম্যপূর্ণ বহুপাক্ষিক প্রতিষ্ঠানগুলির ক্রম উত্থান একটি শ্রেণিবদ্ধ বিশ্বক্রমকে ভেঙে ফেলতে এবং স্থিতিশীল শান্তির পথ প্রশস্ত করতে ফলপ্রসূ হতে পারে।

ভারত তার জি২০ মেয়াদে নাগরিক সমাজের সঙ্গে তার বিদেশ নীতিকে সমন্বিত করে গ্লোবাল সাউথ ও তার বাইরেও একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে।

সংস্কারকৃত বহুপাক্ষিকতার উপর মনোযোগ বজায় রেখে থিঙ্ক২০ (টি২০) এবং সংশ্লিষ্ট টিএফ-৭-কে লিঙ্গ সমতা এবং সংস্কারকৃত বহুপাক্ষিকতার জন্য তাত্ত্বিক সমীক্ষা পরিচালনার উদ্দেশ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে টি২০-র সদস্যরা বহুপাক্ষিকতার জন্য লিঙ্গ-অনুপ্রাণিত সংস্কারমূলক পরিকাঠামোকে এগিয়ে নিয়ে যেতে এই জোটকে মোতায়েন করার স্বার্থে রাজনৈতিক মনোবিজ্ঞানের সঙ্গে জড়িত গবেষকদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখার কথা বিবেচনা করতে পারে। এখনো পর্যন্ত বিচ্ছিন্ন অধ্যয়ন লিঙ্গ ব্যবধান এবং রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের নিরিখে গুরুত্বপূর্ণ ফলাফল প্রদান করেছে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, পুরুষদের প্রায়শই পক্ষপাতমূলক রাজনীতিতে জড়িত বলে উল্লেখ করা হয়, যেখানে নারীরা গার্হস্থ্য রাজনৈতিক বিষয়ে বেশি আগ্রহী।(৩) এ ছাড়াও নারীরা কল্যাণমূলক প্রকল্পগুলির জন্য অর্থায়নকে বেশি অগ্রাধিকার দেন।(৪) এই গবেষণার বেশির ভাগই গ্লোবাল নর্থে  পরিচালিত হলে, গ্লোবাল সাউথের অনুরূপ সমীক্ষাগুলি নানা অঞ্চল জুড়ে উল্লেখযোগ্য ব্যবধান এবং সাযুজ্য তুলে ধরতে পারে।

উপসংহার

ভারতের হাতে জি২০ ব্যাটন থাকার দরুন এটি এফএফপি এবং লিঙ্গ-অনুপ্রাণিত সংস্কারকৃত বহুপাক্ষিকতার উপর গ্লোবাল সাউথের প্রভাব দর্শানোর আদর্শ সময়। জি২০ মেয়াদের ছ’মাস অতিবাহিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভারত নারীদের অংশগ্রহণ এবং অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নকে ত্বরান্বিত করতে সক্ষম হয়েছে৷ আগামী দিনে নয়াদিল্লির কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় নারীবাদী প্রতিফলনকে আরও জোরদার করতে হবে। বহুপাক্ষিকতাকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য এবং জি২০-কে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক মঞ্চ হিসাবে পুনরায় প্রতিষ্ঠা করার কাজে এই উদ্যোগগুলির গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রয়েছে।


১) দোয়েল, লেজলি, ‘সেক্স অ্যান্ড জেন্ডার: দ্য চ্যালেঞ্জেস ফর এপিডেমিয়োলজিস্টস’, ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব হেলথ সার্ভিসেস ৩৩, নং ৩ (২০০৩): ৫৬৯-৫৭৯

২) জোবার্গ, লরা, ‘ইনট্রোডাকশন টু সিকিউরিটি স্টাডিজ: ফেমিনিস্ট কন্ট্রিবিউশনস’, সিকিউরিটি স্টাডিজ ১৮, নং ২ (২০০৯): ১৮৩-২১৩

৩) ক্যাম্পবেল, রোজি এবং ক্রিস্টি উইনটারস, ‘আন্ডারস্ট্যান্ডিং মেন’স অ্যান্ড উইমেন’স পলিটিক্যাল ইন্টারেস্টস: এভিডেন্স ফ্রম আ স্টাডি অব জেন্ডারড পলিটিক্যাল অ্যাটিটিউডস’, জার্নাল অফ ইলেকশনস, পাবলিক ওপিনিয়ন অ্যান্ড পার্টিজ ১৮, নং ১ (২০০৮): ৫৩-৭৪

৪) ক্যাম্পবেল, রোজি, ‘জেন্ডার, ইডিয়োলজি অ্যান্ড ইস্যু প্রেফারেন্স: ইজ দেয়ার সাচ আ থিং অ্যাজ আ পলিটিক্যাল উইমেন’স ইন্টারেস্ট ইন ব্রিটেন?’ দ্য ব্রিটিশ জার্নাল অব পলিটিক্স অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনস ৬, নং ১ (২০০৪): ২০-৪৪