ভারত জি২০–তে উন্নয়ন-তথ্যকে অগ্রাধিকার দেবে

নভেম্বর মাসে বালিতে জি২০ নেতাদের শীর্ষ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে ‘‌উন্নয়নের জন্য তথ্য’‌ নীতি ভারতের জি২০ প্রেসিডেন্সির অবিচ্ছেদ্য অংশ হবে। এই নীতির প্রতি নয়াদিল্লির দায়বদ্ধতা এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে একে শক্তিশালী করার দৃষ্টিভঙ্গি ইতিমধ্যেই স্পষ্ট। ভারতীয় প্রেসিডেন্সির অধীনে মুম্বইয়ে অনুষ্ঠিত জি২০ ডেভেলপমেন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের প্রথম সাইড ইভেন্টে ‘‌উন্নয়নের জন্য তথ্য: ২০৩০ কর্মসূচি এগিয়ে নিয়ে যেতে জি২০–র ভূমিকা’‌ প্রসঙ্গটি আলোচিত হয়েছিল। ভারতের জি২০ শেরপা অমিতাভ কান্ত জোর দিয়ে বলেছিলেন যে দেশটির উচ্চাকাঙ্ক্ষী জেলাগুলিতে প্রশাসন ও জনসেবা প্রদানের জন্য তথ্যের কৌশলগত ব্যবহার তিন বছরে এমন একটি রূপান্তর ঘটিয়েছে যা করতে অন্যথায় ছয় দশক সময় লাগত। তথ্য ভারতের অতিমারি প্রতিক্রিয়া, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, ও খাদ্য নিরাপত্তায় উদ্ভাবন এবং প্রায় সমগ্র জনসংখ্যার জন্য ডিজিটাল আর্থিক অন্তর্ভুক্তি সম্ভব করেছে।

উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলির সমন্বয়ে গঠিত একটি গোষ্ঠী হিসাবে জি২০ স্থিতিশীল উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি’‌স) অর্জনের জন্য সমন্বিত বৈশ্বিক প্রচেষ্টার একটি ছোট সংস্করণ উপস্থাপন করে। জি২০-কে যদি এসডিজি–র দিকে অগ্রগতি ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করতে হয়, তবে এটিকে অবশ্যই দু’‌ধরণের তথ্য–চালিত হস্তক্ষেপ অনুসরণ করতে হবে: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ও বিগ ডেটা অ্যানালিটিক্স ব্যবহারের মাধ্যমে পুরনো ডেটাসেটগুলিকে পুনরুজ্জীবিত করে তথ্যকে বুদ্ধিমত্তায় রূপান্তর করা; এবং ড্রোন, ভূ–স্থানিক মানচিত্রায়ন ও এআই–সহ অত্যাধুনিক উদীয়মান প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভবিষ্যতের নতুন ডেটাসেট তৈরি করা।

দেশটি একটি বড় তথ্য-উদ্যোগ চালু করতে চলেছে, যার অংশ হিসাবে জাতীয় ডেটা গভর্নেন্স ফ্রেমওয়ার্কের অধীনে সংগৃহীত নাম–গোপন–রাখা ডেটাসেটগুলি এআই বাস্তুতন্ত্র, গবেষণা ও স্টার্টআপ সম্প্রদায়গুলির সঙ্গে শেয়ার করা হবে৷

উভয় ক্ষেত্রেই ভারতের কাছে বিশ্বকে দেওয়ার মতো অনেক কিছু রয়েছে। দেশটি একটি বড় তথ্য-উদ্যোগ চালু করতে চলেছে, যার অংশ হিসাবে জাতীয় ডেটা গভর্নেন্স ফ্রেমওয়ার্কের অধীনে সংগৃহীত নাম–গোপন–রাখা ডেটাসেটগুলি এআই বাস্তুতন্ত্র, গবেষণা ও স্টার্টআপ সম্প্রদায়গুলির সঙ্গে শেয়ার করা হবে৷ এই বিশাল ডেটাবেসটি এআই মডেলকে প্রশিক্ষণ দিতে, উদ্ভাবনকে অনুঘটক করতে, এবং আরও কার্যকর নীতি ও বাস্তব সমাধান তৈরি করতে ব্যবহার করা হবে। মে মাসে নীতি আয়োগ ডেটাসেটগুলিকে সহজলব্ধ এবং আন্তঃপরিচালনযোগ্য করতে, এবং তার বিশ্লেষণ ও দৃশ্যমানতার জন্য সহযোগী সরঞ্জাম সরবরাহ করতে যুগান্তকারী ন্যাশনাল ডেটা অ্যান্ড অ্যানালিটিক্স প্ল্যাটফর্ম চালু করেছে, যার লক্ষ্য সরকারি তথ্যের উপলব্ধতা গণতান্ত্রিক করা। এই প্রতিটি উদ্যোগই আরও শক্তিশালী করে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিভঙ্গির উপর ভিত্তি করে তৈরি ডিজিটাল ইন্ডিয়া–কে, যা একটি ডিজিটালভাবে ক্ষমতায়িত সমাজ ও প্রযুক্তি–সক্ষম জ্ঞান অর্থনীতি হিসাবে চিহ্নিত।

ভারতে সম্পূর্ণ নতুন ডেটাসেট তৈরির কাজও বিপুলভাবে এগোচ্ছে। ড্রোনগুলি দেশের ভূখণ্ডকে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিশদে স্ক্যান করছে, এবং এই উপরিচরের ফুটেজ অনন্যভাবে বিস্তারিত মানচিত্র তৈরি করতে অন্যান্য ধরনের ডেটার সাথে মিশ্রিত হচ্ছে। ড্রোন-এর তথ্য কৃষিতে বিপ্লব ঘটাচ্ছে, এবং বিদ্যমান শহরগুলিকে স্মার্ট শহরে রূপান্তরিত করতে সহায়তা করছে। ওয়র্ল্ড ইকনমিক ফোরাম অনুমান করেছে যে ড্রোনের ফলে নতুন ডেটা ইকনমি ভারতের মোট আভ্যন্তর উৎপাদনকে ১০০ বিলিয়ন ডলার বাড়িয়ে দিতে পারে, এবং আগামী বছরগুলিতে প্রায় ৫ লক্ষ চাকরি তৈরি করতে পারে।

প্রকৃতপক্ষে ভূ–স্থানিক ক্ষেত্রে ভারত দ্রুত বিশ্বনেতা হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। অক্টোবরে হায়দরাবাদে রাষ্ট্রপুঞ্জের বিশ্ব ভূ–স্থানিক তথ্য কংগ্রেসে ভাষণ দেওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী মোদী জোর দিয়ে বলেছিলেন যে ভূ–স্থানিক প্রযুক্তি হল ‘‌অন্তর্ভুক্তির একটি হাতিয়ার’‌ যা ‘‌প্রগতিকে চালিত করছে’‌ এবং নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে উন্নয়ন ক্ষেত্রজুড়ে একটি সক্ষমতা প্রদানকারী শক্তি হিসাবে৷ প্রকৃতপক্ষে এটি এমন একটি জায়গা যেখানে ভারত ইতিমধ্যেই তার দক্ষিণ এশীয় প্রতিবেশীদের যোগাযোগ এবং সংযোগের ক্ষেত্রে সহায়তা দিতে শুরু করেছে।

বিভিন্ন দেশকে নিজেদের তথ্য বর্তমান বদ্ধ খামার থেকে মুক্ত করতে হবে, এবং ক্রমবর্ধমান বৃহত্তর পরিমাণ তথ্য সর্বজনীন ও সহজে আবিষ্কারযোগ্য করতে হবে।

যেহেতু ভারত এবং তার জি২০ অংশীদারেরা উন্নয়নের জন্য তথ্য-কেন্দ্রিক সহযোগিতা গড়ে তোলে, তাই তাদের কিছু মূলনীতি মেনে চলা উচিত। বিভিন্ন দেশকে নিজেদের তথ্য বর্তমান বদ্ধ খামার থেকে মুক্ত করতে হবে, এবং ক্রমবর্ধমান বৃহত্তর পরিমাণ তথ্য সর্বজনীন ও সহজে আবিষ্কারযোগ্য করতে হবে। কার্যকরভাবে ব্যবহার করার জন্য তথ্য সহজ, উচ্চমানের এবং রিয়েল টাইমে অফার করা আবশ্যক। পরীক্ষা–নিরীক্ষা এবং উদ্ভাবনের সংস্কৃতি তথ্য সংক্রান্ত ক্রিয়াকলাপকে ঘিরে গড়ে তুলতে হবে, এবং দেশগুলিকে সৃজনশীল উপায়ে ডেটাসেট বিশ্লেষণের জন্য সরঞ্জামগুলিতে বিনিয়োগ করতে হবে। অধিক ফলাফলের জন্য তথ্য বাস্তুতন্ত্রের অংশীদারদের মধ্যে গঠনমূলক প্রতিযোগিতার প্রচার করা যেতে পারে।

জি২০–র সামনে দুটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ রয়েছে। এর সদস্যদের প্রয়াসী হতে হবে যাতে সংবেদনশীল ও অ–সংবেদনশীল তথ্য সম্পর্কে একটি সাধারণ বোঝাপড়ায় পৌঁছনো যায়। তাদের এমন কাঠামোগুলি নিয়ে আবার ভাবতে হবে, যা সীমান্ত অতিক্রম করে ডেটা শেয়ার করতে সহায়তা করতে পারে। এ বিষয়ে নীতিগত ঐকমত্য রয়েছে যে একটি উন্মুক্ত ভাণ্ডার তৈরি করা উচিত যেখানে দেশগুলি মানুষের কল্যাণের জন্য তথ্য সংরক্ষণ করতে পারে। কিন্তু তথ্য সার্বভৌমত্ব ও সুরক্ষার প্রয়োজনের মধ্যে একটি বিচক্ষণ ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সেইসঙ্গেই একটি ডেটা কমন্স–এর ধারণা তৈরি করতে হবে যা বৈশ্বিক সম্প্রদায়কে উপকৃত করতে পারে। শেষ পর্যন্ত জি২০–র তথ্য প্রবিধানগুলিতে পারস্পরিকতার আদর্শ যুক্ত করা উচিত, যাতে‌ দেশগুলি উন্নয়ন-তথ্য ভাগ করে নিতে পারে এবং তা থেকে উপকৃত হয়।

পরীক্ষা–নিরীক্ষা এবং উদ্ভাবনের সংস্কৃতি তথ্য সংক্রান্ত ক্রিয়াকলাপকে ঘিরে গড়ে তুলতে হবে, এবং দেশগুলিকে সৃজনশীল উপায়ে ডেটাসেট বিশ্লেষণের জন্য সরঞ্জামগুলিতে বিনিয়োগ করতে হবে।

২০৩০ এগিয়ে আসছে, এবং তাই ভারতীয় প্রেসিডেন্সির সময়টি উন্নয়নের জন্য তথ্য নিয়ে আলোচনার সন্ধিক্ষণ হয়ে উঠতে পারে। ২০১৯ থেকে নেতারা এই প্রসঙ্গটির গুরুত্ব ধারাবাহিকভাবে পুনর্ব্যক্ত করেছেন, এবং সাম্প্রতিককালে জাপান, সৌদি আরব, ইতালি ও ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্সির সময় সকলেই স্বীকার করেছে যে ডিজিটালাইজেশনের দ্বারা উৎপাদিত তথ্যসম্পদকে কাজে লাগাতে হবে। কিন্তু সরকার–সরকার সংলাপের পরিপূরক হতে হবে ক্রমবর্ধমানভাবে বেসরকারি ক্ষেত্র, সুশীল সমাজ, এবং নারী ও তরুণদের সঙ্গে পদ্ধতিগত সম্পৃক্ততা। তবেই তথ্য–নেতৃত্বাধীন ক্ষমতায়নকে মূলস্রোতে আনা যাবে। এটি একটি মূল উপাদান যা ভারত জি২০ প্লেবুকে তুলে ধরতে পারে, এবং এইভাবে তা অতীতের কৃতিত্ব ও বর্তমান অগ্রাধিকারগুলিকে রূপ দিয়ে বিশ্বের কাছে এই গোষ্ঠীর উত্তরাধিকারের একটি অংশ করে তুলতে পারে।


এই ভাষ্যটি প্রথমে ‘হিন্দুস্তান টাইমস’–এ প্রকাশিত হয়েছিল।